শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২০ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ সুন্দরী। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ। পরিচিত মুখ। মডেল, অভিনেত্রী, নায়িকা হিসেবে রয়েছে পরিচিতি। তারকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মুখ দেখিয়েছেন ছোট-বড় পর্দায়। কিন্তু হালে টিকে থাকতে পারেননি। নায়িকা, মডেলের তকমা লাগিয়ে হাঁটছেন ভিন্নপথে। নিজের পরিচয়, শারীরিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে বেছে নিয়েছেন অন্ধকার জগতকে।
সুন্দর, আকর্ষণীয় চেহারা দেখে তাদের স্বরূপ চেনার উপায় নেই। বুঝার উপায় নেই চুরি, প্রতারণা থেকে শুরু করে মাদক এমনকি অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িয়েছেন তারা। ইতিমধ্যে তাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। আবার আটক হওয়ার পরও সামাজিক কারণে ছেড়ে দেয়া হয়েছে অনেককে। কখনও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও কখনও সাধারণ মানুষের হাতে আটক হয়েছেন তারা।
মিরপুরের পল্লবীর একটি বাড়ি। প্রায় রাতেই আড্ডা জমে সেখানে। ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে মাঝে-মধ্যে রাতভর এই আড্ডায় অংশ নেন এক নায়িকা। বুঁদ হয়ে থাকেন ইয়াবায়। ফ্লোরে বিছানা পেতে সেখানেই রাত্রি যাপন করেন। কখনও কখনও শেষ রাতে ওই বাসা থেকে বের হয়ে যান। অভিযোগ রয়েছে অর্থের বিনিময়ে রাতভর অনেকের সঙ্গ দেন তিনি। এমনই একটি রাতে ওই নায়িকার ইয়াবা সেবনের দৃশ্য ধারণ করা হয়েছে গোপন ক্যামেরায়। সেই ভিডিও রয়েছে এই প্রতিবেদকের হাতে। মাদক সংক্রান্ত একটি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে অভিষেক ঘটেছিলো এই নায়িকার। তবে নায়িকার চেয়ে মডেল হিসেবে তার পরিচিতি বেশি। করেছেন আইটেম গানও। ময়মনসিংহের ওই মেয়ে একটি বিশেষ প্রতিযোগিতার ‘সুপার স্টার’ হিসেবে মিডিয়ায় পা রাখেন।
সম্প্রতি তার চেয়ে ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটিয়েছেন একটি টেলিভিশনের সিরিয়ালের অভিনেত্রী সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সুলতানপুর বড় বাজার এলাকার মৃত আজমল হকের মেয়ে সুরাইয়া নীল (২০)। নাটক ছাড়াও ‘অন্ধকার জগত’ নামে একটি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। মডেল, অভিনেত্রী হিসেবে পরিচিতি নীলকে যশোরের অভয়নগর নওয়াপাড়ার একতারপুর থেকে গত ৯ই ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সুন্দরী এই তরুণী দীর্ঘদিন যাবত নিজের সৌন্দর্যকে পুঁজি করে প্রেমের নামে ব্ল্যাকমেইল, প্রতারণা করছিলেন। সর্বশেষ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবু হেনা মোস্তফা কামাল মিলনকে বাসায় নিয়ে তিনি ও তার চক্রের সদস্যরা জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের চেষ্টা করছিলেন। শেষ পর্যন্ত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অভিযান চালিয়ে নীলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। উদ্ধার করেছে ওই আইনজীবীকে। পিবিআই যশোর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানান, নীলসহ চক্রের সদস্যরা উচ্চাভিলাষী, নেশাগ্রস্ত ও ভয়ংকর অপরাধী।
আটবার কারাভোগ করেছেন এক নারী। নানাভাবে তার পরিচিতি। কখনও ডাক্তার, কখনও আইনজীবী, কখনও সাংবাদিক, কখনও মডেল, নায়িকা। একেক সময় একেক নামও ব্যবহার করেন তিনি। কখনও ডালিয়া, সাবিয়া, তানিয়া, নদী, নওশীন, সুমি। নিজের রূপ-যৌবনকে পুঁজি করে তিনি করেন নানা অপকর্ম। তার প্রকৃত নাম তানিয়া শিকদার। তানিয়ার বিরুদ্ধে রাজধানীর মোহাম্মদপুর, আদাবর, দারুস সালাম, তেজগাঁও, নিউ মার্কেট, দক্ষিণখান, বিমানবন্দর, উত্তরা, মিরপুর, কাফরুল, শাহজাহানপুরসহ বিভিন্ন থানায় প্রায় ২৭টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারও হয়েছেন একাধিকবার। তবুও অন্ধকার পথ ছাড়েননি। চুরি, প্রতারণা, মাদক থেকে শরীর বিক্রি সবই করেন তিনি। অভিনব কায়দায় বাসা-বাড়িতে ঢুকে হাতিয়ে নেন অর্থ ও স্বর্ণালংকার। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তাকে আটক করেছিলো গাজীপুরের পুবাইল থানা পুলিশ। তানিয়া সিকদার গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানার গজারিয়াপাড়ার মৃত হাসান সিকদারের মেয়ে। চলচ্চিত্রে পার্শ্ব নায়িকার চরিত্রে কাজও করেছেন। সাধ ছিল নায়িকা হওয়ার। সেটা হতে গিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে প্রতারিত হয়েছেন বলে গ্রেপ্তারের পর পুলিশকে জানান তানিয়া। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে প্রতারণা ও চুরিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। প্রবাসে অবস্থান করছেন এমন ব্যক্তির দেশে বসবাসরত স্বজনদের টার্গেট করেন তানিয়া। প্রবাসীদের বন্ধু সেজে দেশে তাদের বাসায় ঢুকে অভিনব কৌশলে হাতিয়ে নেন লাখ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার।
চলচ্চিত্রের আরেক বির্তকিত নাম তানিন সুবহা। বরিশালের গৌরনদীর মোল্লারহাটের মেয়ে তানিন সুবহার মিডিয়ায় অভিষেক ঘটে ২০১৫ সালে। আজাদ কালামের পরিচালনায় ‘যমজ’ নাটকে মোশাররফ করিমের বিপরীতে অভিনয় করেছেন তিনি। সবুজবাগ এলাকায় বিউটি পার্লার রয়েছে তার। নিজ বিউটি পার্লারের কর্মী টুনিকে দিয়ে অনৈতিক কাজ করাতে চেষ্টা করতেন এই নায়িকা। নিজেও একই কাজ করতেন। এসব বিষয়কে কেন্দ্র করে মামলা করা হয়েছিলো থানায়। গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো তানিন সুবহাকে। দীর্ঘদিন কারাভোগও করেছেন এই নায়িকা। বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে তার অন্তরঙ্গ ছবিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ২০০৮ সালে স্বামী পনিরকে ডিভোর্স দেওয়ার পর থেকেই বেপরোয়া এই নায়িকা। ‘অবাস্তব ভালোবাসা’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড়পর্দায় অভিষেক ঘটেছিলো তানিন সুবহার। তারপর থেকে বির্তকিত এই নায়িকা কর্ম-অপকর্ম দুটিই করে যাচ্ছেন সমান তালে।
তারও আগে চাঞ্চল্যকর একটি ঘটনার পরই জানা যায় নাসিমা আক্তার নদী সম্পর্কে। চিত্রনায়িকা নদী হিসেবেই পরিচিত তিনি। অভিনেতা মান্না ও শাকিব খানের সঙ্গে নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অশ্লীলতার অভিযোগে এফডিসিতে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন বেশ আগে। তারপর থেকে অর্থ উপার্জনের জন্য বেছে নেন ভিন্নপথ। নদীর আয়ের উৎস হয়ে উঠে প্রতারণা ও মাদক ব্যবসা। এছাড়াও অর্থের বিনিময়ে বিত্তশালীদের প্রমোদ ভ্রমণের সঙ্গী হন তিনি। উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টরের চার নম্বর সড়কের একটি বাসায় ছিলেন দীর্ঘদিন। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অর্থ উপার্জনের জন্য নদী একটি প্রতারক চক্র গড়ে তুলেছেন। ওই চক্রের সদস্যরা নিয়মিত তার বাসায় যাতায়াত করতো। তাদের দু’জন নদীর বাসাতেই থাকতো। ওই বাসাতেই ইয়াবা সেবন করতেন নদী ও তার সঙ্গীরা। নদী ও তার সঙ্গীরা মূলত ইয়াবার ডিলার। পরিচিতজনদের কাছে ইয়াবা সুন্দরী হিসেবেই পরিচিতি গড়ে উঠেছে তার। বেশ আগে নদী ও তার চার সঙ্গীর বিরুদ্ধে শনিবার গুলশান ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় দু’টি মামলা দায়ের করা হয়। সূত্র-মানবজমিন।
Leave a Reply